(ইয়াজুজ ও মাজুজ কেন মানুষদের হত্যা করবে, জুলকারনাইন কীভাবে প্রাচীরটি
নির্মাণ করেছেন?)
بسم الله الرحمن
الرحيم
আস্‘সালামু আলাইকুম।
মোহাম্মাদ কাসীম বলেন, অনেক সময় যাবৎ অনেক পণ্ডিত, চিন্তাবিদ এবং ঐতিহাসিকগণ ইয়াজুজ ও মাজুজের মত বিভ্রান্তিকর বিষয় নিয়ে
গবেষণা করেছেন। এবং এই প্রাণীকে ঘিরে বিভিন্ন জল্পনা কল্পনা এবং
তত্ত্বগুলি আছে। আমি এই প্রাণীগুলির সাথে সম্পর্কিত অনেকগুলি স্বপ্ন দেখেছি, এবং আজ আমি ইয়াজুজ ও মাজুজ সম্পর্কে যা প্রত্যক্ষ করেছি সেই স্বপ্নগুলো
একত্রিত করে তার একটি বিস্তৃত বিবরণ উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। এটি
কেবল একটি উদাহরণ এবং আল্লাহ্ ভাল জানেন। ইয়াজুজ
এবং মাজুজ দুটি বর্ণের যা ছায়াময় কালো ও সাদা, এগুলি
দেখতে খুব বড় ধরণের গরিলার মত এবং সমস্ত দেহে চুল দিয়ে ঢাকা থাকে। আমি
তাদের সঠিক উচ্চতা অনুমান করতে পারিনা কারণ এটি তাদের মধ্যে পরিবর্তিত হয়, তবে আমি বলতে পারি যে তারা মানুষের গড় উচ্চতার চেয়ে অনেক লম্বা। ইয়াজুজ
ও মাজুজের অবিশ্বাস্য শক্তি, মনোবল এবং গতি রয়েছে
এবং তারা দুই পায়ে দৌঁড়ায়, যদিও তারা যখন বাতাসে ঝাঁপিয়ে
পড়তে চায় তখন চারটি অঙ্গ ব্যবহার করে। এই
ছবিটি একবার দেখুন, আমি ইয়াজুজ ও মাজুজকে যেমন দেখেছি
তার এটিই নিকটতম উদাহরণ। ইয়াজুজ এবং মাজুজের নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে
আমি নিশ্চিত নই, তারা ডারিয়াল ঘাটের কাছাকাছি
বা কাজাখিস্তান ও উজবেকিস্তানের পার্বত্য সীমান্তের আশেপাশে বা রাশিয়ার উত্তর দিকে
কোথাও অবস্থান করছে কিনা তা আল্লাহ্ ভাল জানেন। আমি
দেখতে পেলাম যে পাহাড়টি অনেক লম্বা, খাড়া,
তীক্ষ্ণ এবং আরোহণ করা খুব কঠিন ছিল। একটি
পরিষ্কার চিত্র আঁকার জন্য, আমি এই পর্বতটিকে পাকিস্তানের
নাঙ্গা পর্বত, ডাকনাম ঘাতক পাহাড়ের সাথে তুলনা করব কারণ এটি
আরোহণ করা কঠিন। ইয়াজুজ ও মাজুজ একটি উঁচু ছাদ বিশিষ্ট ভূগর্ভস্থে
একটি বড় হলে বাস করে যা তারা আরোহণ করতে পারেনা। এই
হলটিতে পৌঁছানোর জন্য পর্বতে একটি খোলা জায়গা রয়েছে যা একটি বিশাল সুড়ঙ্গ, যা দিয়ে অবশেষে বড় হলে বা তাদের আবাসে পৌঁছে যায়। তাদের
আবাসের আনুমানিক মাত্রা সম্পর্কে আল্লাহ্ ভাল জানেন, এটি
কেবল একটি উদাহরণ এবং বাস্তবিকভাবে নেওয়া উচিত নয়। ইয়াজুজ
ও মাজুজ যে হলে বাস করে তার ছাদে ছিদ্র থাকে তাই অক্সিজেন এবং সূর্যের আলো ভিতরে প্রবেশ
করে। তারা কখন কী খায় বা পান করে তা আমি কখনও দেখিনি তবে আমার স্বপ্নে আমি আকর্ষণীয়
কিছু দেখেছি যে ইয়াজুজ ও মাজুজ তাদের হলগুলির দেয়ালে মানুষের মুখের চিত্রকর্ম আঁকে
এবং তাদের বংশধরকে মানুষ সম্পর্কে শেখায়, এবং আরও
শেখায় এই মানুষগুলির কারণে আমরা এখানে বন্দী হয়ে আছি এবং তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে
হবে, সুতরাং তাদের প্রজন্মের বিদ্বেষ বজায় রয়েছে এবং তাদের
বংশধররা এভাবেই বংশেরধারা বহন করে চলেছে। আমার
স্বপ্নে আমি দেখেছি যে ইয়াজুজ ও মাজুজ যখন তাদের গুহা থেকে বেরিয়ে আসছিল তখন তারা
দুষ্টুমি ও বিপর্যয় ঘটাতে থাকে। এবং তারপরে তারা ৪ থেকে ৬ মাসের জন্য তাদের বাড়িতে
ফিরে আসত, আর এই সময়সীমার মধ্যেই জুলকারনাইন ইয়াজুজ
ও মাজুজকে লোহার প্রাচীর দিয়ে আটকে রেখেছিলেন। আমার
স্বপ্নে আমি এই প্রাচীরটি জুলকারনাইন এবং তার সাহায্যকারীদের দ্বারা তৈরি করতে দেখেছি। প্রথমে, জুলকারনাইন অভ্যন্তরীণ সুড়ঙ্গ প্রবেশ পথটি অবরুদ্ধ করেন যা ইয়াজুজ ও মাজুজের
হলে যেতে পথপ্রদর্শন করে, এরপরে তিনি বাইরের খোলা পথ বন্ধের
জন্য কাজ শুরু করেছিলেন এবং এই প্রক্রিয়াটি শেষ করতে উনার ৬ বছর সময় লেগেছিল। এখানে
কোনও ক্রেন বা কোনও ধরণের মেশিন ছিলনা যা শ্রমিকদের কোনো উপকারে আসতে পারে। তাই
গলিত আকরিক দিয়ে পাহাড়ের গোড়াটি পূরণ করার পরে, বাকী
শূন্যস্থান পূরণের জন্য তারা পাহাড়ের চূড়া থেকে লোহা ও তামা দিয়ে তৈরি গলিত আকরিক
ঢালতে শুরু করল এবং পর্বতটি খুব তীক্ষ্ণ এবং খাড়া ছিল বলে এটি করা একটি কঠিন কাজ ছিল। আমি
জুলকারনাইনকে দূর থেকে দেখছিলাম বলে আমি তাঁর মুখ দেখিনি, তবে আমি বলতে পারি যে লোহার প্রাচীর তৈরিতে কাজ করার সময় তিনি ধূসর পোশাক
পরেছিলেন। এই ছবিটি দেখুন, আমি দেখেছি জুলকারনাইনের নিমার্ণ
করা প্রাচীরটি এটির চারপাশে মরিচাযুক্ত এই রঙের সাথে মিল ছিল এবং এটি লোহা এবং তামা
দ্বারা গঠিত ছিল। প্রতিদিন ইয়াজুজ ও মাজুজ তাদের বন্দি দশা থেকে
মুক্ত হওয়ার আশায় জুলকারনাইন নির্মিত লোহার প্রাচীরের ভিতরে ঢুকে তা ভেঙ্গে ফেলার
জন্য, তারা প্রত্যেকে প্রাচীরের কাছে ঘুরে বেড়ায়
কিন্তু কোন উপকার হয়না। আমি দেখেছি তারা ইতিমধ্যে তাদের টানেলের প্রবেশ
পথের বাঁধা ভেঙেছে। আমি আরও দেখেছি যে বাইরের প্রাচীরটি এখন প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান দ্বারা আচ্ছাদিত
কারণ কাঁদা, ঘাস এবং অলকগুচ্ছ এই বাঁধাটির উপর বাড়তে
শুরু করেছে, সুতরাং আপনি বলতে পারবেন না যে সেখানে একটি প্রাচীর
রয়েছে। ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে মানবতার সবচেয়ে খারাপ যুদ্ধ দজ্জালের
সাথে সংঘটিত হয়। এবং প্রায় সমস্ত গোলাবারুদ সেই যুদ্ধে শেষ হয়েছিল। ইয়াজুজ
ও মাজুজ যখন বেরিয়ে আসে মানুষের কাছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোনো ভারী অস্ত্র
থাকেনা। স্বপ্নে আমি একজন শক্তিশালী মাথাওয়ালা ব্যক্তির সাথে লড়াই করতে যাই। এবং
যাওয়ার আগে আমি আমার পরিবার এবং আরও কিছু লোককে উন্নত ধরণের ট্রেনে রেখে যাই। আমি
তাদের বলি "এখানে আমার জন্য অপেক্ষা করুন,
আমি ফিরে আসার পরে আমরা এই জায়গাটি চিরতরে ছেড়ে চলে যাব এবং ঈসা
আলাইহিস সালাম (যীশু) এর সাথে যোগদান
করব।"
আল্লাহর সাহায্যে সেই শক্তিশালী মাথাওয়ালা ব্যক্তিকে লড়াই ও পরাধীন
করার পরে তখন আমি মোহাম্মাদ (ﷺ) এর কন্ঠস্বর শুনি
"কাসীম, ইয়াজুজ এবং মাজুজ বের হয়েছে
দ্রুত আপনার বাড়িতে যান।"
যখন ইয়াজুজ ও মাজুজ বেরিয়ে আসে তারা নিরলসভাবে আক্রমণ করে। আমি
তাদের দুটি পায়ে দৌড়াতে দেখেছি এবং মাঝে মাঝে তাদের চারটি অঙ্গকে একসাথে করে লাফাতে
দেখেছি। বিশেষত যখন তারা আকাশে লাফিয়ে উঠে। আমি খুব দ্রুত আমার বাড়িতে
পৌঁছে যাই, যখন আমি সেখানে পৌঁছেছি তখন দেখি পরিস্থিতি
ঠিক আছে আমি লোকদের বলছি যে "আপনারা সবাই সাবধানতার সাথে
বসুন এবং ইয়াজুজ ও মাজুজ বেরিয়ে এসেছে এবং তারা যে কোনও সময় আমাদের ট্রেনে আক্রমণ
করতে পারে।"
আমি ট্রেনটি চালাতে শুরু করলাম এবং ট্রেনের ছাদে উঠলাম, যাতে করে ইয়াজুজ ও মাজুজ যদি আক্রমণ করে। তাহলে
আমি তাদেরকে আল্লাহর নূর দিয়ে হত্যা করব। আল্লাহর নূর তখন আমার
তর্জনীতে উপস্থিত হয়েছিল এবং পথে চার-পাঁচটি সাদা
বর্ণের ইয়াজুজ ও মাজুজ আমাদের ট্রেনে আক্রমণ করেছিল, যখন
আমি তাদের দেখলাম মনে হয় তারা আকাশ থেকে নেমে আসছে। তারা
আতঙ্কজনক তীব্র চিৎকার এবং প্রচুর গতিতে আক্রমণ করে। কিন্তু
যখন আমি তাদের উপর আল্লাহর নূর নিক্ষেপ করি তখন তারা বাতাসে মারা যায়। অন্য
একটি স্বপ্নে আমি দেখেছি যে ইয়াজুজ এবং মাজুজ দ্রুত দৌঁড়ায় এবং তারা ছোট ছোট লাফ
দেয় এবং তারপরে তারা একটি দুর্দান্ত লাফ দেয় যা তাদের আকাশে নিয়ে যায় এবং তারা
উঁচ্চ থেকে উঁচ্চতায় পৌঁছে যায়। তারা কত উঁচুতে লাফাতে পারে সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত
নই, তবে আমি আপনাকে বলতে পারি যে আমার একটি স্বপ্নে
যখন আমি তাদের আক্রমণটির অপেক্ষায় ছিলাম তখন আমি তাদের আকাশ থেকে আক্রমণ করতে দেখলাম
এবং তারা নীচের স্তরের মেঘের পিছনে ছিল। যা
একীভূত গোলাকার মেঘ বা অনুভূমিক ও অনূর্ধ্ব মেঘ খণ্ডের মত মনে হয় তবে আল্লাহ্ ভাল জানেন। ইয়াজুজ ও মাজুজ যখন আকাশে ওঠে তখন তারা তীব্র গতিতে
এমনভাবে নেমে আসে যে, কেউ তাদের থেকে নিজেদের রক্ষা
করতে সক্ষম হয়না। ইয়াজুজ ও মাজুজকে মেরে ফেলার সবচেয়ে ভাল উপায়
যা আমি বুঝতে পেরেছি তা হল তারা বাতাসে থাকাকালীন তাদের চলাচল সীমিত হওয়ায় তাদের
হত্যা করা এবং স্থলভাগে তারা দ্রুত চলতে পারে এবং প্রচুর গতি পেতে পারে এবং তাদের দেহও
খুব শক্তিশালী এবং তাদের বাহু ও পায়ে প্রচুর শক্তি রয়েছে যা তারা তাদের অস্ত্র হিসাবে
ব্যবহার করে। আমি ইয়াজুজ ও মাজুজকে কোন অস্ত্র বহন করতে দেখিনি তবে তারা অস্ত্র ব্যবহার
করবে কিনা তা আল্লাহ্ ভাল জানেন। উন্নত
ট্রেনে উঠার সময় আমি কয়েক জনকে দূর থেকে দেখেছি এবং তাদের ট্রেনে চড়ানোর জন্য আমি
সেখানে থামলাম, এবং আমার সাথে থাকা লোকেরা আমাকে
বলেছিল যে এটি থামানো উচিত না কারণ এটি বিপদজনক হতে পারে। তবে
আমি বলেছিলাম যে "সম্ভবত আমি আরও কয়েক জনকে
বাঁচাতে সক্ষম হব" এবং আমি যখন ট্রেন থামিয়ে ছিলাম কালো
রঙের ইয়াজুজ এবং মাজুজ আক্রমণ করেছিল, এবং যেহেতু রাত ছিল,
তখন আমার পক্ষে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তবে আমি তাদের সকলকে আল্লাহর নুরের কাছে বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছি এবং যে
লোকেরা আমার সাথে ছিল তারা আল্লাহর রহমতে রক্ষা পেয়েছিল এবং কোন ক্ষতি হয়নি। তবে
আমি যাদের জন্য আমাদের ট্রেন থামিয়েছিলাম তাদের হত্যা করা হয়েছিল, এবং লোকেরা বলেছিল যে "কাসীম আপনি কয়েকজনকে
বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য কি আমাদের হত্যা করবেন।" এবং আমি বলেছিলাম যে
"আপনারা ঠিক বলেছেন আমাদের ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।" এই ঘটনার পরে আমরা
কোথাও থামিনি এবং অবশেষে আল্লাহর রহমতে ফজরের সময়ে ঈসা আলাইহিস সালাম (যীশু) এর কাছে পৌঁছে গেলাম। ঈসা
আলাইহিস সালাম (যীশু) এর কাছে পৌঁছানোর কয়েক মুহুর্ত পূর্বে উনি পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন এবং
তারপরে আমরা ঈসা আলাইহিস সালাম (যীশু) এর সাথে বসবাস শুরু করি। ইয়াজুজ ও মাজুজ এতদিন
তাদের গুহায় কীভাবে বেঁচে আছে, বা তারা কত জন এবং কে
সবাইকে মেরে ফেলেছে তা আমি কখনও দেখিনি। তবে
আমি দেখেছি যে ইয়াজুজ এবং মাজুজ পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেয় এবং খুব কম লোকই বেঁচে
থাকে। আল্লাহ্ ভাল জানেন।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।